সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৩ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার আশায় নিরাশা এনে দিয়েছে লকডাউন!

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার আশায় নিরাশা এনে দিয়েছে লকডাউন!

স্বদেশ ডেস্ক:

গত মার্চের মাঝামাঝি থেকেই দেশে করোনা পরিস্থিতি বৃদ্ধি পেতে থাকায় সরকার সারাদেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে সীমিত পরিসরে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে। কিন্তু পরবর্তীতে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিলে এবং ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। যদিও এখনও দেশে শিথিলভাবে লকডাউন চলছে।

কিন্তু এই লকডাউনের ফলে, বিদেশে উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী হাজার হাজার শিক্ষার্থী, যারা ইতিমধ্যেই ভর্তি এবং স্কলারশিপের সুযোগ পেয়েছিল, তারা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের এই সমস্যায় বেশি পড়তে হচ্ছে।

৫ এপ্রিল থেকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস পূর্বের সকল ভিসা ইন্টারভিউ বাতিল করে এবং নতুন ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়া বন্ধ করে দেয়। করোনা লকডাউন এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা যতদিন চলবে, ততদিন এমন অচলাবস্থাই চলবে বলে জানিয়েছে দূতাবাস। এতে অনেক শিক্ষার্থীই তাদের ফান্ডিং এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সকল আশঙ্কা করছে।

দেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি এবং ভারতে করোনার অস্বাভাবিকতার কারণে দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দিন-দিন বেড়েই চলেছে।

বিশ্বে উচ্চশিক্ষায় সেরা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র এবং এই দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ, ফেলোশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে। দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই নিজেদের আমেরিকার পড়ার জন্য প্রমাণ করেছে এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করতে আগ্রহী। কিন্তু ২০২০ সালের মতোই একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ভিসা প্রত্যাশীদের।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী সম্মানজনক স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকাতে গবেষণার মাধ্যমে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য যায়। সারাবিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই বিদেশে পড়বার সুযোগ করে নেয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। এতে করে দেশেরও সুনাম বৃদ্ধি পায়।

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা সাধারণত তিনটি সেশনে ভর্তি হতে পারে, যেমন স্প্রিং (জানুয়ারি), সামার (মে) এবং ফল (জুলাই-আগস্ট)। সাধারণত অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ফল সেমিস্টারে ভর্তি হতে পছন্দ করেন। কিন্তু ২০২০ সালের ফল সেমিস্টারে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা করোনার প্রকোপের কারণে এখনও সেশন শুরু করতে পারেনি।

আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী, কোনও শিক্ষার্থী যদি ভর্তি হবার পর সঠিক সময়ে ক্লাস শুরু হবার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে তার ভর্তি এবং স্কলারশিপ বাতিল হয়। কিন্তু কিছু করোনার কারণে কিছু শিক্ষার্থী তাদের ভর্তির মেয়াদ ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়াতে পেরেছে। তাই ২০২১ সালের সামার এবং ফল সেশনে ভিসার চাহিদা অন্যসময়ের তুলনায় বেশি।

কিন্তু ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউনের কারণে আমেরিকান দূতাবাস সকল প্রকার ভিসা ইন্টার্ভিউ বাতিল করে দেয়। তবে সামার সেশনের জন্য আগামী ১১ মে জরুরি ভিসাস ইন্টার্ভিউ এর ব্যবস্থা করেছে দূতাবাস। যদিও ফল সেমিস্টারের ভর্তিচ্ছুদেরও এখন ভিসা পাওয়া প্রয়োজন।

লকডাউনের মধ্যেই সরকার জরুরি সেবা, শিল্প-কারখানা, বিপণীবিতন এবং আন্তঃশহর পরিবহন সেবা চালু করলেও, মার্কিন দূতাবাস নতুন করে কোনও ভিসা আবেদন গ্রহণ করছে না। দূতাবাস বলছে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় পুনরায় কার্যক্রম শুরু হবে সরকারের কাছ থেকে নির্দেশনা পাবার পর। যদিও প্রতিবেশী দেশ চিন এবং শ্রীলঙ্কা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে, কিন্তু মার্কিন দূতাবাস এব্যাপারে তেমন কোনও বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।

যেহেতু ভর্তি পেছানোর আর তেমন সুযোগ নেই এবং পরপর দুই বছর একই সমস্যার সম্মখীন হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের, তাই স্কলারশিপের সুযোগ অনেকটা হাতছড়া হবার অবস্থাই হয়েছে। অনেক আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় এখন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ অফার করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না।

কেস স্টাডি:
চুয়েট থেকে পাস করা যুক্তরাষ্ট্রে পিএইডি ডিগ্রি করার সুযোগ পাওয়া জ্যোতিরময়ী সাহা বলেন, ‘আমি ফান্ডিং এর মাধ্যমে ফল ২০২০ সেশনে ভর্তির সযোগ পাই। কিন্তু দুইবার আমাকে ভর্তি প্রক্রিয়া পেছাতে হয়েছে। ফান্ড ছাড়া আমার পক্ষে এই ডিগ্রি নেয়া সম্ভব না। যদি এবারও না হয়, তবে আমার পক্ষে আর ভর্তি হওয়া সম্ভব হবে না।’

আরও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ফাতিমা মুক্তি জানান, তিনি সাউথ ক্যারোলিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরাল ফেলোশিপসহ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ পেয়েছেন। তার ভর্তি হবার কথা ছিল ফল ২০২০ সেশনে। কিন্তু পুরো গবেষক দলের মধ্যে একমাত্র তিনিই এখনও কাজে যোগ দিতে পারেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে একজন শিক্ষার্থীর বিভিন্ন কোর্স করাসহ আবেদনের জন্য প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান চলমান এই পরিস্থিতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী দ্বিতীয়বার এই খরচ বহনের অবস্থাতেও নেই।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনা প্রকোপ রোধে লকডাউন অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সরকার যদি শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া লকডাউনের আওতার বাইরে না রাখে, তাহলে হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।

এই অচলাবস্থা দূর করার জন্য শিক্ষার্থীদের একটি অংশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে। তাদেরকে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়া হলেও, এখনও অবস্থার তেমন কোনও উন্নতি দেয়া যায়নি।

শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, সরকার ও মার্কিন দূতাবাসের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

সূত্র : ইউএনবি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877